তুলা


বাংলাদেশে দুই ধরনের তুলা চাষ করা হয়। সমতল এলাকার ৭টি জোনে সমভূমির তুলা বা আপল্যান্ড কটন এবং পার্বত্য এলাকার ২টি জোনে পাহাড়ি তুলার চাষ করা হয়। পাহাড়ি তুলা এপ্রিল-মে মাসে এবং সমভূমির তুলা জুলাই-আগস্ট মাসে বপন করা হয়। পাহাড়ি তুলা ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এবং সমভূমির তুলা জানুয়ারি-মার্চ মাসে উত্তোলন করা হয়।
 

১। তুলার চাষকৃত জাতগুলো : সমতল এলাকায় বর্তমানে, সিবি-৫, সিবি-৯ সিবি-১০ ও সিবি-১১ প্রভৃতি উচ্চফলনশীল জাতের তুলা এবং হাইব্রিড জাতের মধ্যে হীরা হাইব্রিড রূপালী-১ ও ডিএম-১ জাতের তুলা চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ি তুলা-১ ও পাহাড়ি তুলা-২ নামে উচ্চফলনশীল জাতের তুলা চাষ হয়।
 

২। তুলার বার্ষিক উৎপাদন ও চাহিদা : বিগত ২০০৯-১০ উৎপাদন মৌসুমে ৩১,৫০০ হেক্টর (সমভূমির তুলা-১৭,০৪০ এবং পাহাড়ি তুলা ১৪,৪৬০ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ করা হয়। যা থেকে প্রায় ৭০,০০০ বেল (সমভূমির তুলা ৬৪,০০০ বেল এবং পাহাড়ি তুলা-৬,০০০ বেল) আঁশতুলা উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে তুলার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪০ লাখ বেল।
 

৩। তুলার ব্যবহার : বীজ তুলা হতে ৩৫-৪০% আঁশ ও ৬০-৬৫% তুলা বীজ পাওয়া যায়। তুলার আঁশ বস্ত্রকলগুলোতে সুতা তৈরির প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্জ্য তুলা (গার্মেন্ট শিল্প ও জুট) লেপ-তোষক ও শতরঞ্চি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। তুলা বীজ হতে তেল ও খৈল পাওয়া যায়। তুলাবীজ থেকে প্রাপ্ত পরিশোধিত তেল ভোজ্যতেল ও অপরিশোধিত তেল সাবান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তুলা বীজের খৈল গবাদিপশু ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজের গায়ে লেগে থাকা আঁশ (Fuzz) পৃথক করার পর এগুলো ব্যান্ডেজ, গজ, ব্লটিং পেপার এবং কটন বাড প্রভৃতি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
 

৪। তুলা চাষ সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি ও কর্মসূচি : তুলার সাথে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাকসবজি যেমন- লালশাক, ডাঁটাশাক, মুলাশাক, বরবটি, মুলা, শসা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ধনেপাতা ইত্যাদি চাষ করা হচ্ছে। রিলে ক্রপ হিসেবে আদা, হলুদ, মরিচ, পটল, আখ ইত্যাদি ফসলের সাথে তুলা চাষ করা যায়। বিভিন্ন ফল বাগান যেমন- কলা, পেঁপে, আনারস, আম বাগানে প্রতি বছর আন্তঃফসল হিসেবে তুলা চাষ করা হয়। এ ছাড়া মুগডাল, ভুট্টা, আলু, গম ও উচ্চ মূল্যের শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করে শস্যবিন্যাস প্রবর্তন করা হচ্ছে।
 

উল্লেখ্য, ২০১০-১১ মৌসুমে ৪২ হাজার হেক্টর (সমভূমির তুলা-২৬ হাজার হেক্টর ও পাহাড়ি তুলা ১৬ হাজার হেক্টর) জমিতে তুলা চাষ করে মোট ৯২,৫০০ বেল (সমভূমির তুলা ৮৫,৭০০ বেল ও পাহাড়ি তুলা ৬৮০০ বেল) আঁশতুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়।