‘গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ’- প্রবাদ বাক্যের সেই গোলা ভরা ধান আর এখন নেই। কৃষক মারুফ হোসেনের বাড়িতে ধানের গোলা দেখে তাই চমকে ওঠেন প্রবীণেরা। আর কৌতুহলে অপরিচিত বস্তুটি সম্পর্কে জানতে চায় নতুন প্রজন্ম।   পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বাড়ির উঠানে ৫টি বড় বড় ধানের গোলা রেখে সেগুলোতে ধান রাখছেন বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের ঝুঁটিয়াডাঙ্গা এলাকার কৃষক মারুফ।

তিনি বলেন গোলাগুলো আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য বহন করে। আমার দাদার আমল থেকে দেখে এসেছি এগুলো। ধান রাখার পাশাপাশি ঐতিহ্য রক্ষায় তাই এখনো রেখে দিয়েছি’।

মারুফ জানান, একটি গোলা তৈরি করতে ৫/৬ হাজার টাকা খরচ হয়, যেটিতে ৪০-৪৫ মণ ধান বা ভুট্টাসহ দানা জাতীয় ফসল রাখা যায়। এতে ফসল রাখা অনেকটাই নিরাপদ। গোলার নিচের ফাঁকা স্থানে মাচা করে রাখা যায় ছাগল, হাঁস, মুরগিও।
কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে কৃষকের ঘরে ঘরে এক সময় গোলায় ধান রাখা হতো। এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না, বিলুপ্তির পথে গোলার সে ঐতিহ্য। একেবারে তুলে না ফেলে কোনো কোনো কৃষক বাড়ির উঠানে রেখে দিয়েছেন কিছু কিছু গোলা। তবে অবহেলায় পড়ে থাকা গোলাগুলোতে ধান রাখেন না তারা। উক্ত গ্রামের কৃষক এলাহী মণ্ডলেরর সাথে কথপোকথনে বোঝা গেল এখন গোলাঘরের কদর নেই।তিনি জানান যে ধান পাই, তা তো বিক্রি করে আর খেতেই ফুরিয়ে যায়। গোলায় রাখবো কি? তবুও অযত্ন-অবহেলায় বাড়িতে রেখে দিয়েছি। একদিন এভাবেই শেষ হয়ে যাবে’।

প্রবীণেরা বলছেন, প্রবাদের সেই গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ এখনো আছে। দেশের প্রতিটি কৃষক পরিবারে রয়েছে কমপক্ষে একটি, দু’টি গরু, পুকুরও আছে অনেকের। শুধু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধানের গোলা।

তারা জানান, প্রথমে বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হতো। এঁটেল মাটির কাদা তৈরি করে ভেতরে ও বাইরে আস্তরণ লাগিয়ে দিতেন কৃষকরা। সবশেষে ওপরে টিন বা খড়ের চালা দিয়ে তৈরি করা হতো গোলা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গ বা আয়তক্ষেত্র আকারেও গোলা তৈরি করা হতো।

ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। প্রবেশপথ রাখা হতো বেশ ওপরে, যেন চোর/ডাকাতে নিতে না পারে। ধানের গোলায় ঢুকে ক্ষতি করতে পারতো না ইঁদুরও। গোলায় শুকানো ভেজা ধানের চাল হতো শক্ত। কৃষকের কাছে এটিই ছিলো ধান রাখার আদর্শ পন্থা।

বৃদ্ধ কৃষক আবুল হোসেন জানালেন আগে আমরা গোলাতেই ধান রাখতাম। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গোলা থাকতো। তবে এখন আর নেই। নাতিদের কাছে বললে তারা বিশ্বাসও করতে চায় না’।