বিভিন্ন ফুলের মধ্যে ইদানিং গ্লাডিওলাস ফুলটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আকর্ষণীয় রঙ, গঠন এবং দীর্ঘ সময় এটি সজীব থাকে বলে এই ফুলটি বেশ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। বাংলাদেশের যশোর, সাতক্ষীরা, গাজীপুর ও সাভার অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।
শ্রেণীবিভাগঃ গ্লাডিওলাসের বহু জাত রয়েছে। এইগুলিকে সাধারণভাবে বৃহদাকার, বড় ফুল, ক্ষুদ্র ফুল এবং প্রজাপতি ইত্যাদি নামে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। এই জাতগুলি আগাম, মাঝারি ও নাবী জাতে ভাগ করা যায়। আবার এগুলোর মধ্যে সিঙ্গেল ও ডাবল জাতও রয়েছে। গ্লাডিওলাস ফুল বিভিন্ন রংয়ের হতে পারে, যেমন-সাদা, হলুদ, গোলাপী, ফিকে লাল, লাল, গাঢ় লাল, কমলা, বেগুনী ইত্যাদি।
জাতঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট গ্লাডিওলাসের কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হলো-
  • বারি গ্লাডিওলাস-১: ফুলের বোঁটা লম্বা ও বেশি ফ্লোরেটযুক্ত। লাল রঙের দুটি পাঁপড়িতে হলুদ ছোঁপ থাকে। সাধারণত পানিতে ফুলের স্থায়িত্বকাল ৮-৯ দিন।
  • বারি গ্লাডিওলাস-২: লম্বা বোঁটাসম্পন্ন ফুলে গাঢ় মেজেন্টা রঙের অনেকগুলো ফ্লোরেট থাকে। প্রতি ফ্লোরেটের দুটি পাঁপড়িতে ক্রিম রঙের ছোপ দেখা যায় এবং অন্যান্য পাঁপড়িতে সাদা স্ট্রাইপ থাকে। সাধারণত পানিতে ৯ থেকে ১০ দিন তাজা থাকে।
  • বারি গ্লাডিওলাস-৩: সারা বছর চাষ করা যায়। বাজারে চাহিদা আছে। এ জাতের গাছের পাতা তরবারির মতো। কর্ম রোপণের উপযুক্ত সময় মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর। ফুলের রঙ সাদা। প্রতি হেক্টরে (২৪৭ শতকে) ১.৭৫ থেকে ২.০০ লক্ষ ফুলের স্টিক পাওয়া যায়। ফুলের সজীবতা ৮-৯ দিন থাকে।
জমি নির্বাচনঃ জৈব সার সমৃদ্ধ, বেলে দো-আঁশ অথবা দো-আঁশ মাটি। উঁচু জমি, যে জমিতে বৃষ্টি অথবা সেচের পানি জমে থাকে না। জমির পিএইচ  মান ৬.৫ থেকে ৭.৫ হওয়া দরকার, তবে এর চাইতে কম পিএইচ সমৃদ্ধ মাটিতেও এই ফুল চাষ করা যেতে পারে। অধিক কাদাযুক্ত এবং কালো মাটির জমিতে চাষ না করাই ভাল। হালকা মাটির ক্ষেত্রে জৈবসার মিশিয়ে মাটির গুণাগুন ভাল করতে হবে। একই জমিতে বারবার গ্লাডিওলাস চাষ করলে মাটি বাহিত রোগের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ফসলও চাষ করতে হবে।
আবহাওয়াঃ আর্দ্র, রৌদ্র উজ্জল, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। দিনের তাপমাত্রা ১৫০ থেকে ২০ সে. থাকলে উৎপাদন ভালো হবে। উপযুক্ত আর্দ্রতা থাকলে ৫০সে. পর্যন্ত তাপমাত্রা গ্লাডিওলাস সহ্য করতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রায় গাছের পানি ধরে রাখার ক্ষমতায় সমস্যা দেখা দেয়, তাছাড়া প্রথম বীজ বপন থেকে প্রথম পাতা বের হওয়া পর্যন্ত যদি উচ্চ তাপমাত্রা থাকে তবে গাছ সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রসত্ম হয়। ছোট দিন এবং আলোর তীব্রতা কম হলে ফুল উৎপাদন কমে যায়। পূর্ণ সূর্যালোক এই ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, ছায়ায় এই ফুল ভাল হয় না। গাছের বৃদ্ধির প্রতিটি ধাপে বিশেষ করে কর্ম (বড় গুঁড়িকন্দ) রোপণ এবং স্পাইক (যে দন্ডটি ফুল ও পাতা ধরে রাখে) বের হওয়ার আগ মুহুর্তে মাটিতে আর্দ্রতার ঘাটতি হলে ফলন কমে যাবে।
কর্ম (বড় গুঁড়িকন্দ)  ও কর্মেল (ছোট গুঁড়িকন্দ)
লাগানোর উপযুক্ত সময়ঃ
কর্ম রোপণঃ অক্টোবর মাসে জমি তৈরির পর ৪.৫-৫.০ সেন্টিমিটার ব্যাসের রোগমুক্ত কর্ম মাটির ৬-৭ সেন্টিমিটার গভীরতায় রোপণ করতে হবে।
ভাল জাতের বৈশিষ্ট্যঃ
দেশীয় মাটি ও আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী;
  • রোগ বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন;
  • সহজে গাছ হেলে পড়ে না;
  • উন্নত মানের কর্ম ও কর্মেল ব্যবহার;
  • স্টিকে ফুলের সংখ্যা বেশি থাকা;
  • ফুলের রং অধিকতর উজ্জ্বল হওয়া;
  • বেশি সময় ফুলদানীতে সতেজ থাকা।
জমি চাষ পদ্ধতিঃ গ্লাডিওলাস ফুলের জন্য জমিকে খুব ভালোভাবে চাষ করতে হয়, এর মূল বেশি গভীরে প্রবেশ করে না, তাই মাটি খুব গভীরভাবে চাষ করার প্রয়োজন নেই। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি গভীরতায় জমি চাষ করতে হবে, তবে মাটির নীচে শক্ত কাদা মাটির সত্মর থাকলে মাটি আরো গভীরভাবে চাষ করতে হবে। পোকামাকড় মুক্ত রাখতে জমি চাষের সময় ক্লোরডেন এবং মাটি বাহিত রোগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য মিথাইল  ব্রোমাইড-ক্লোরোপিকরিন (১৬২কেজি/একর) প্রয়োগ করে মাটি শোধন করতে হবে। এ সময়ে প্রতি একরে প্রায় ১০০০০ কেজি গোবর, ২০ থেকে ২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৫ থেকে ২০ কেজি এমওপি সার জমিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোপণ পদ্ধতিঃ
কর্ম (মাটির নীচের বড় গুঁড়িকন্দ)-এর ক্ষেত্রেঃ
রোগমুক্ত বড় (প্রায় ৩০ গ্রাম) ও মাঝারি (প্রায় ২০ গ্রাম) ওজনের ১.৫  থেকে  ২ ইঞ্চি ব্যাস যুক্ত কর্ম ২.৫ থেকে ৩.৫ ইঞ্চি গভীরতায় রোপণ করতে হবে। কর্ম অবশ্যই সুপ্তাবস্থা (যে সময়টুকুতে অঙ্কুর গজাবে না তাকেই সুপ্তাবস্থা বলে) মুক্ত হতে হবে, অর্থাৎ জমির পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। করম লাগানোর পূর্বে অঙ্কুরিত করে ০.১% থেকে ০.৩% ব্যাভিষ্টিন দ্রবনে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে, অপরপক্ষে কর্মেল লাগানোর ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। উন্নত মানের ফুল পাওয়ার জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০ ইঞ্চি হতে হবে। তবে জমির অপচয় রোধ করার জন্য ‘‘১০ ইঞ্চি x ৬ ইঞ্চি’’ দূরত্বে রোপণ করা যেতে পারে।
কর্মেল (মাটির নীচের বড় গুঁড়িকন্দ)-এর ক্ষেত্রেঃ
কর্ম এর চারদিকে গুচ্ছাকারে ছোট ছোট কর্মেল পাওয়া যায়, কর্মেলের চারদিকে বাদামী রঙের শক্ত খোসা থাকে যার কারণে অঙ্কুরোদগম হতে দেরী হয়, তাই কর্মেল লাগানোর আগে সাবধানতার সাথে খোসা ছাড়িয়ে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম তাড়াতাড়ি হবে। কর্মেল লাগানোর ক্ষেত্রে মাটি খুব ঝুরঝুর করে তৈরি করতে হবে এবং কর্ম-এর চেয়ে বেশি পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি কর্মেল খুব ছোট হওয়ায় রোপণদূরত্ব কমিয়ে ৪ ইঞ্চি x ২ ইঞ্চি দূরত্বে এবং অল্প গভীরতায় (প্রায় ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি) রোপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগঃ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হয়। শেষ চাষ দেয়ার সময় প্রতি বর্গমিটারে ৫-৬ কেজি গোবর সার, ৩০ গ্রাম টিএসপি এবং ৩০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। গ্লাডিওলাসে বেশি ইউরিয়া সার দেয়া উচিত নয়। কারণ এতে পুষ্পদন্ড বেশি লম্বা ও দূর্বল হয়ে যায়। প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম ইউরিয়া এর অর্ধেক রোপণের ২০-২৫ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক পুষ্পদন্ড বের হওয়ার সময় উপরিপ্রয়োগ করা উচিত।
চাষের সময়ে পরিচর্যা
(ক) সেচ ও পানি নিস্কাশনঃ ভাল ফুল পাবার জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকতে হবে। কর্ম মাটিতে লাগানোর পর জমিতে হালকা সেচ দিতে হবে, যাতে কর্মগুলি মাটিতে লেগে যেতে পারে। পরবর্তীতে আবহাওয়ার অবস্থা বুঝে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। ঝরণা বা পস্নাবন দুই পদ্ধতিতেই সেচ দেওয়া যায়। মাটিতে পানির পরিমাণ কম থাকলে গাছের বৃদ্ধি কমে যাবে। জমিতে পানির পরিমাণ বেশি হলে কর্ম পচে যেতে পারে।
(খ) আগাছা দমনঃ গ্লাডিওলাস ফুলের উৎপাদনে নিয়মিতভাবে গভীর শিকড় যুক্ত আগাছা দমন খুবই জরুরী। আগাছানাশক হিসাবে অনুমোদিত আগাছানাশক ১.৮ কেজি/একর স্প্রে করতে হবে। আগাছানাশক ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কর্ম ও কর্মেল ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
(গ) মালচিং ও মাটি উঠানোঃ গ্লাডিওলাস ফুল চাষের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিচর্যা হচ্ছে গোড়ায় মাটি উঠানো। অঙ্কুরোদগমের পর প্রতি ১৫ থেকে ৩০ দিন পর পর উপরের মাটি খুপরী বা ’’হো’’ দিয়ে মালচিং করে নিতে হবে। গাছে ৩ থেকে ৫ টি পাতা বের হওয়ার পর একবার এবং স্পাইক (৭টি পাতা বের হওয়ার পর) বের হওয়ার সময় গাছের গোড়ায় দুই পাশ থেকে মাটি উঠিয়ে দিতে হবে। সেচ দেওয়ার পর বা কোন কারনে কর্ম বা কর্মেল মাটির উপরে উঠে এলে পাশ থেকে মাটি নিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাটি উঠিয়ে দিলে মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকে এবং বাতাসে গাছ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
(ঘ) স্টেকিং (কাঠি দিয়ে কান্ডকে দাঁড় করিয়ে রাখা): প্রতি সারিতে ৬.৫ ফুট দূরে দূরে বাঁশের/কাঠের কাঠি পুঁতে ৬ ইঞ্চি উপরে একটি এবং স্পাইক বের হওয়ার স্থানে একটি তার বা নাইলনের রশি টানাতে হবে। প্রতি গাছে আলাদা করে ছোট ছোট খুঁটি লাগানো যেতে পারে। গাছ ঘন করে লাগালে স্টেকিং না করলেও চলে। স্টেকিং দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কান্ডে বা মাটির নীচে কর্ম বা কর্মেলে আঘাত না লাগে।
(ঙ) রোগ বালাই, পোকা-মাকড় এবং দমন পদ্ধতি
শোষক পোকা (থ্রিপস্): এটি অতি ক্ষুদ্র ছাই রঙের পোকা যা খালি চোখে দেখা যায় না। এই পোকা পাতা, স্পাইক ও ফুলের রস শোষণ করে ফলে আক্রান্ত পাতায় রুপালী ও বাদামী রঙের লম্বা দাগ দেখা যায় এবং পাতা ও ফুল শুকিয়ে যায় এবং আক্রমণ বেশী হলে গাছও শুকিয়ে যায়। সংরক্ষিত অবস্থায় কর্মও আক্রান্ত হতে পারে।
ব্যবস্থাপনাঃ এই পোকা দমন করার জন্য ২০ থেকে ৩০ মিলি ম্যালাথিয়ন ১৮ লিটার পানিতে মিশিয়ে ২ থেকে ৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। নোভাক্রন (০.১ থেকে ০.১৫%) স্প্রে করেও ভাল ফল পাওয়া যায়।
জাব পোকা (এফিড): এফিড কচি পাতা, নতুন স্পাইক ও ফুলের রস খায়।
ব্যবস্থাপনাঃ স্টার্টার/টাফগর ৪০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে স্প্রে করে এই পোকা দমন করা যায়।
নেমাটোডস/কৃমিঃ বহু ধরণের নেমাটোড গ্লাডিওলাসে আক্রমণ করতে পারে। এদের মধ্যে ‘রুট নট নেমাটোড’ উলেস্নখযোগ্য।
ব্যবস্থাপনাঃ মাটি শোধন করে এবং নেমাটোড নাশক নিউফরান/ফুরাকার্ব ৩ থেকে ৪ কেজি /একরে ব্যবহার করে নেমাটোডের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
বট্রাইটিস ব্লাইটঃ ছত্রাক দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগে পাতা ও ফুল আক্রান্ত হয়। প্রাথমিকভাবে পাতার এক পাশে ছোট বাদামী বা ধূসর দাগ দেখা দেয়। তবে আক্রমণ বেশি হলে অন্য পাশেও দাগ দেখা দেয়। পাঁপড়ির উপর ছোট থেকে বড় পানির মত ভিজা দাগ দেখা দেয় যা পরবর্তীতে ধূসর দাগে পরিণত হয়। ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এই রোগ বেশি হয়।
ব্যবস্থাপনাঃ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ এই রোগকে অনেকটা নিয়ন্ত্রনে রাখে। ডাইথেন এম-৪৫ ১৫ দিন পর পর প্রতি লিটার পানিতে ১ থেকে ২ গ্রাম অথবা বেনডাজিম/মেটাজেব/মেনকোজেব প্রতি লিটার পানিতে ১ থেকে ২ গ্রাম হারে স্প্রে করে এই রোগ দমন করা যায়।
ফিউজেরিয়াম রটঃ ছত্রাক দ্বারা এই রোগের সৃষ্টি হয়। এই রোগে গাছের বৃদ্ধি ধীর হয়ে কান্ড ও পাঁপড়ি বিকৃত আকার ধারণ করে এবং স্পাইক খুব কম বের হয়। কর্ম ও করমেল সংরক্ষনের পূর্বে অথবা সংরক্ষণের সময় পচে যায়।
ব্যবস্থাপনাঃ এই রোগের আক্রমণ রোধ করা খুব কঠিন। তবে প্রতিরোধী ও সহনক্ষম জাত ব্যবহার করে এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সুস্থ কর্ম ব্যবহার, পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ এবং কর্ম ও কর্মেল শোধন করেও এই রোগ প্রতিহত করা যায়। এটি একটি বীজ ও মাটি বাহিত রোগ। যে সমসত্ম মাটিতে বায়ু চলাচল কম এবং মাটিতে পানি জমে থাকে সেখানে এই রোগ বেশি হয়। প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন/বেনডাজিম/কার্বেন্ডাজিম এবং ২ গ্রাম মেনকোজেব/মেটাজেব একত্রে মিশিয়ে কর্ম শোধন করে এবং একই ওষধ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
ভাইরাসঃ গ্লাডিওলাস অনেক কর্ম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, পাতা, ফুল ও স্পাইক বিকৃত হয় এবং রঙিন ফুলের উপর লম্বা দাগ পড়ে।
ব্যবস্থাপনাঃ একবার আক্রান্ত হলে কর্মসহ গাছ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কর্মেল-এ ভাইরাস প্রবেশ করার আগেই সংগ্রহ করা হলে রোগমুক্ত কর্মেল পাওয়া যেতে পারে। কিছু কিছু ভাইরাস পোকা দ্বারা ছড়ায় বলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি স্টার্টার/টাফগর/পারফেকথিয়ন কীটনাশক স্প্রে করে এ রোগকে দমন করা যায়।
ফুল কাটাঃ কর্ম লাগানোর ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। স্পাইক এর নিচের দিকে ১ থেকে ২ টি ফুলে  (ফ্লোরেট) রং দেখা দিলে স্পাইক (যে দন্ডটি ফুল ও পাতা ধরে রাখে) কাটতে হবে। স্পাইক কাটার পর গাছে ৪ থেকে ৫ টি পাতা এবং স্পাইকে ১ থেকে ২টি ফুটন্ত ফুল থাকতে হবে। ফুল কাটার সাথে সাথে সেগুলো ছায়ায় কিছু সময় রাখতে হবে।
কর্ম তোলা ও সংরক্ষণ
ক) কর্ম তোলাঃ ফুল কাটার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে কর্ম উঠাতে হবে। (গাছের পাতা যখন হলুদ ও বাদামী রং এর হয় )। ফুল কাটার ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যে কর্ম উঠালে খুবই ভালো মানের কর্ম পাওয়া যায়, যা থেকে পরে ভাল ফুল পাওয়া যায়। তোলার সময় কর্ম এর গায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
খ) সংরক্ষণঃ কর্ম ও কর্মেলকে ব্যাভিষ্টিন ১% দ্রবনে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর আলো-বাতাসযুক্ত স্থানে ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। কর্মকে ২.৫ থেকে ৫ সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। দেশীয় পদ্ধতিতে কর্ম ও কর্মেল আলো-বাতাসযুক্ত স্থানে বাঁশের মাচা অথবা কাঠের ট্রেতে এক সত্মর করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। বালতিতেও কর্ম সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এক জাত অন্য জাতের সাথে মিশ্রিত না হয়। সংরক্ষণের সময় কর্মের উপরের খোসা ছাড়ানো উচিত নয়। অল্প পরিমাণ কর্মের ক্ষেত্রে রেফ্রিজারেটরের সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কর্মেল সংখ্যায় বেশি এবং আকারে ছোট থাকে বলে ছিদ্রযুক্ত নাইলনের ব্যাগে ভরে বাঁশের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখেও সংরক্ষণ করা যায়। কর্ম ও কর্মেল সংরক্ষণ করার পরে সংরক্ষিত স্থান মাঝে মাঝে পরিদর্শন করে খেয়াল রাখতে হবে যেন পোকামাকড়ের আক্রমণ বা রোগাক্রান্ত না হয়।
ফলনঃ একর প্রতি ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কর্ম থেকে ১ লক্ষ ৫ হাজার থেকে এক লক্ষ ২০ হাজার পর্যন্ত স্টিক পাওয়া যায়। একর প্রতি ৪ হাজার কেজি কর্ম ও প্রায় ৫ হাজার কেজি কর্মেল পাওয়া যায়। প্রতিটি কর্মের ওজন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম এবং প্রতিটি কর্মেলের ওজন প্রায় ২০ থেকে ৫০ গ্রাম। প্রতিটি কর্ম থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫টি কর্মেল প্রায় যায়।
প্রক্রিয়াজাতকরণঃ কাটা ফুল বেশি দিন তাজা রাখতে দ্রবণে ৬০০ পিপিএম ৮-হাইড্রক্সি কুইনোলাইন সাইট্রেট এর সাথে ৪% চিনির দ্রবণ মিশিয়ে দিতে হবে। স্পাইককে পলিথিনে মুড়ে কার্টুনে রাখতে হবে। কার্টুনটি ৪ থেকে ১০ সে. তাপমাত্রায় তিন দিন পর্যন্ত রাখতে হবে।
প্যাকিং: ৫ ফুট লম্বা, ২৪ ইঞ্চি চওড়া এবং ১২ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ছিদ্র কাগজের বা যুক্ত কাঠের বাক্সে স্পাইক গুলি রাখতে হবে। বাক্সের চারিদিকে স্পাইক এবং বান্ডেলের ফাঁকে ফাঁকে শোষক তুলা রাখতে হবে।